★*★টিটি'র একদিন★*★

লিখেছেন লিখেছেন মামুন ০৭ মে, ২০১৬, ১২:২১:১৫ রাত

বিমান বন্দর স্টেশন ছেড়ে ট্রেন খুলনা অভিমুখী। ধীরে ধীরে গতি বাড়ছে। সময়ের বুক থেকে বের হওয়া আরো অনেক কু-ঝিকঝিকের সাথে ট্রেনের গুলোও মিলায়.. বাতাসে.. শব্দ তরংগ।

যুবক ওরা চারজন। এক টেবিল মাঝে রেখে সামনাসামনি। টুয়েন্টি নাইন খেলছে। অপর পাশে ভিন্ন বয়সের নারী- পুরুষ শিশু। একেবারে শেষ মাথায় দুজন দুপাশের বন্ধ দরোজার ওপরের খোলা অংশ দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে। সেদিকের অপর বগি থেকেই আসলেন টিটি।

বয়ষ্ক মানুষ। ইউনিফর্মের ভেতরের মানুষটার কথা বলছিলাম। অন্য বগিতে পা রাখার মুহুর্তেই দুই বিপরীত পাশে দাঁড়ানো যাত্রীদের দিকে তাকান। সময় কাটে..কথা বার্তায়.. আর শব্দবিনিময়ের সাথে সাথে গোপন লেনদেন টুকু চলন্ত ট্রেনকে শিউড়ে দিতেই তীব্র বাঁকে পৌঁছে ট্রেন কেঁপে ওঠে.. হুইশেলের শব্দে চারপাশ কাঁপিয়ে দিয়ে বাঁক নেয় ট্রেন।

একে একে চেক করে তাস খেলারত গ্রুপের নিকট থামেন। ওপাশে ছোট্ট বাবুটা তার বাল্যশিক্ষায় পড়ছে,

' ঘ - ঘুষ খাওয়া মহা পাপ

ঘুষ দূর্ণীতির বাপ।'

বাবুটা ওর বাবাকে জিজ্ঞেস করে, 'বাবা, ঘুষ কিভাবে খায়?'

আশপাশের সব কিছু কেমন নীরব মনে হতে থাকে টিটির কাছে। বুকের বাম পকেটের ওখানটায় কেমন জ্বলে ওঠে। ওপর নিচে সব দিকে।

ট্রেনের দুলুনিতে স্থির হতে একটু সময় নেন। বাবুটার সামনে হাঁটু ভেংগে বসেন।

' আসো বাবা আমার সাথে। আমি বলছি তোমায়।'

অবাক সবার সামনে দিয়ে ছোট্ট বাবুটার হাত ধরে এখন পোষাকের ভেতরের মানুষটি দুই বগীর সংযোগস্থলে দাঁড়ানো সেই দুই যাত্রীর সামনে গিয়ে দাঁড়ান। বুক পকেট থেকে বের করা একটু আগের গোপন সময়, বর্তমানে এনে সেটার মোড়ক উন্মোচন করেন। অবাক যাত্রী দুজনের দৃষ্টির সামনে নিজের কঠোর দৃষ্টি আর নীরব চাহনি নিয়মকে বড্ড তীব্রভাবে রিয়্যাক্ট করালো এক আন্ত:নগর ট্রেনে।

বাবুটার থুতনি নেড়ে আদর করে টিটি বলেন,

' আমি যে টাকাগুলি ফেরত দিলাম, ওটা নেয়াটা ঘুষ খাওয়া ছিল। আমি মহাপাপ করেছি। আমার দুই কান জোরে মলে দাও। তারপর এই দুইজনের গুলিও মলে দিও। ওরা ঘুষ দিয়েছে আমাকে।'

সময় স্থির থাকে যেন। কেবল চলন্ত ট্রেনের এই আওয়াজ ভেসে আসে, 'ঘুষ খাওয়া মহা পাপ... ঘুষ দূর্ণীতির বাপ'...।

একজন টিটি বেলাশেষের আবীর মেখে মেখে পরিশুদ্ধির পথে পা রাখেন। জানেন সময় একদম-ই নাই। তারপর ও শুরুটা করেন।

শুরু, যে কোনো সময়েই করা যায়। দরকার কেবল একটু সামনে পা বাড়ানো। আজ স্মিত হেসে একজন টিটি ভাবেন, তিনি শুরু করতে পেরেছেন.. জানালার বাইরে তখন সন্ধ্যা নামবে একটু পরেই।

★মামুনের অণুগল্প

বিষয়: সাহিত্য

১০১১ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

368255
০৭ মে ২০১৬ সকাল ০৫:৫৪
awlad লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ এরোকোম আরো লিকা ছাই,মানুস এর বিবেক এক ডিন জাগটে পারে,
০৭ মে ২০১৬ রাত ০৮:৪৮
305704
মামুন লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম।
আপনার অনুভবের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই।
অনেক ভালো থাকুন।
368257
০৭ মে ২০১৬ সকাল ০৭:৩১
শেখের পোলা লিখেছেন : আহারে, বাস্তবে যদি এটা ঘটত! একজনও অন্ততঃ অপরাধ বুঝে তা পরিত্যাগ করত!
০৭ মে ২০১৬ রাত ০৮:৫৫
305705
মামুন লিখেছেন : সংসার সাগরে আশা-ই একমাত্র ভেলা। ইনশা আল্লাহ পরিবর্তন আসবেই।
নিজের কথা বলি, একটা গার্মেন্টস এর গ্রুপ স্টোর ম্যানেজার আমি, অনেক অবৈধ টাকা আয়ের সুযোগ রয়েছে, নিজেকে আল্লাহর ভয়ে কঠীনভাবে দমন করেছি। মেয়ে জেএসসি তে গোল্ডেন এ প্লাস পেয়ে একটা এন্ড্রয়েড সেট চাইলো, দিতে পারিনি, অথচ সাপ্লাইয়ারদের জাস্ট মোবাইলে বললেই ঢের সারি সেট চলে আসত। মেয়ের কাছে একজন ব্যর্থ বাবা হওয়াটা মেনে নিয়েছি, আল্লাহ ও নিজের কাছে ছোট হতে চাইনি।
সব কিছু নিজের কাছে- ঈমানের পরীক্ষায় পাস করার সংগ্রামে লিপ্ত রয়েছি।
ধন্যবাদ আপনাকে।
368275
০৭ মে ২০১৬ সকাল ১১:০৯
বিবর্ন সন্ধা লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম


"শুরু যে কোন সময় করা যায়, দরকার কেবল একটু সামনে পা বাড়ানো" লিখাটা মনে আশা জাগায়।
০৭ মে ২০১৬ রাত ০৮:৫৬
305706
মামুন লিখেছেন : ওয়ালাইকুম আসসালাম।
হ্যা, আশাকে সামনে রেখে সৎ ভাবে চলার নামই জীবন।
ধন্যবাদ সাথে থাকার জন্য।
368307
০৭ মে ২০১৬ সন্ধ্যা ০৭:৪৮
আবু তাহের মিয়াজী লিখেছেন : ভালো লাগলো
০৭ মে ২০১৬ রাত ০৮:৫৭
305707
মামুন লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম।
ভালো লাগার অনুভূতি রেখে গেলেন, অনেক ধন্যবাদ ভাই।
জাজাকাল্লাহু খাইর।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File